Disorder
Psycho Education
অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার:  শিশুর নিজস্ব জগৎ

অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার: শিশুর নিজস্ব জগৎ

রনি একটি হাসিখুশি ছয় বছরের ছেলে। বাইরে থেকে দেখলে তাকে আর দশটা সাধারণ শিশুর মতোই মনে হয়। কিন্তু রনির জগৎটা একটু আলাদা।

স্কুলে টিফিন পিরিয়ডে সব বাচ্চারা যখন একসঙ্গে হৈচৈ করে খেলে, রনি তখন ক্লাসের এক কোণে চুপচাপ বসে তার খেলনা গাড়ির চাকা ঘোরাতে থাকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সে এই কাজটি করতে পারে, যেন গাড়ির চাকার ঘূর্ণনে সে এক অন্যরকম আনন্দ খুঁজে পায়। কেউ তাকে ডাকলে সে হয়তো শুনতেই পায় না, অথবা শুনলেও সাড়া দিতে সময় নেয়। শিক্ষিকা যখন তাকে অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলতে বলেন, রনি মাথা নিচু করে ফেলে, চোখে চোখ রাখে না। নতুন কোনো খেলার নিয়ম বা দলবদ্ধ খেলার প্রস্তাব তার কাছে খুব কঠিন মনে হয়।

একদিন তাদের ক্লাসে নতুন এক ছাত্র এলো। রনির শিক্ষক সবাইকে নতুন বন্ধুটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। এরপর শিক্ষিকা রনিকে বললেন, "রনি, তুমি তোমার খেলনা গাড়িটা ওকে একটু দেখাও।" রনি সাথে সাথেই অস্থির হয়ে উঠলো। তার রুটিন ভেঙে যাচ্ছে! তার খেলনা অন্য কেউ ধরবে? সে তৎক্ষণাৎ চিৎকার করে উঠলো, "না! এটা আমার!" শিক্ষিকা তাকে শান্ত করতে অনেক চেষ্টা করলেন, কিন্তু রনি তার খেলনা গাড়ি নিয়ে আরও জেদ ধরে বসে পড়লো।

রনির মা যখন তাকে স্কুল থেকে নিতে এলেন, শিক্ষিকা রনির এই আচরণের কথা তাকে বললেন। রনির মা মাথা নেড়ে সায় দিলেন। তিনি জানেন, রনির শব্দ আর আলোর প্রতি একটা বিশেষ সংবেদনশীলতা আছে। জোরে গান বাজলে রনি কানে হাত দেয়, মেলা বা ভিড়ের জায়গায় সে অস্বস্তি বোধ করে। বাড়িতেও তার কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। সে প্রতিদিন একই রঙের প্লেটে খায়, একই চেয়ারে বসে এবং তার বইগুলো তাকে নির্দিষ্ট করে রাখা আলমারিতেই থাকতে হবে। একটু এদিক-ওদিক হলেই সে খুব রেগে যায় বা অস্থির হয়ে পড়ে।

রনির মা লক্ষ্য করেছেন, রনি সব সময় সরাসরি কথা বলতে পছন্দ করে। ইশারা-ইঙ্গিত বা মজার ছলে কিছু বললে সে বুঝতে পারে না। যেমন, তিনি যদি মজা করে বলেন, "রনি, তুমি তো একটা হাতি!", রনি বিভ্রান্ত হয়ে যায় এবং সত্যি সত্যি নিজেকে হাতি ভাবতে শুরু করে। তার কল্পনা শক্তি অন্যদের মতো নয়।

তবে রনির একটি বিশেষ ক্ষমতা আছে। সে সংখ্যার হিসাব খুব দ্রুত করতে পারে। তার বয়স ছয় হলেও, সে অনায়াসে দশ বাই দশের গুণ বলতে পারে। মানচিত্র দেখলে সে এক নিমিষেই রাস্তা চিনে নিতে পারে। এই গুণটি দেখে তার মা-বাবা খুব অবাক হন।

এই গল্পে রনির মধ্যে ASD-এর যে বৈশিষ্ট্যগুলো আমরা পাই:

  1. সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় অসুবিধা:

    • অন্য বাচ্চাদের সাথে মিশতে না পারা এবং একা খেলনা নিয়ে ব্যস্ত থাকা।
    • চোখে চোখ না রাখা।
    • অন্যের আহ্বানে সাড়া দিতে দেরি করা।
    • দলের খেলায় অংশ নিতে অনীহা।
  2. যোগাযোগের অসুবিধা:

    • কথোপকথনে সরাসরি ভাব প্রকাশ এবং রূপক বা ইশারা বুঝতে না পারা।
  3. সীমাবদ্ধ, পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ ও আগ্রহ:

    • খেলনা গাড়ির চাকা নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যস্ত থাকা (পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ)।
    • নির্দিষ্ট রুটিন বা অভ্যাসের প্রতি তীব্র নির্ভরতা ("এটা আমার!" বলে চিৎকার করা)।
    • পরিবর্তনে তীব্র প্রতিক্রিয়া বা জেদ।
    • সংখ্যা এবং মানচিত্রের প্রতি বিশেষ আগ্রহ (সীমাবদ্ধ বা গভীর আগ্রহ)।
  4. সংবেদনশীলতার ভিন্নতা:

    • শব্দ ও আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা (কানে হাত দেওয়া, ভিড়ে অস্বস্তি)।

গুরুত্বপূর্ণ দ্রষ্টব্য: এই গল্পটি কেবল উদাহরণ। একজন ASD শিশুর মধ্যে সব লক্ষণ নাও থাকতে পারে, অথবা লক্ষণগুলো ভিন্নভাবে প্রকাশ পেতে পারে। কোনো শিশুর মধ্যে যদি এই ধরনের লক্ষণগুলো দীর্ঘস্থায়ীভাবে দেখা যায় এবং তার দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে, তবে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।