Mental Health
Psychologist
মনোবিজ্ঞানী কেন ওষুধ দেন না?

মনোবিজ্ঞানী কেন ওষুধ দেন না?

আপনার প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং অনেকের মনেই এই ভুল ধারণাটি থাকে। আসুন বিষয়টি পরিষ্কার করি:

মনোবিজ্ঞানী (Psychologist) কেন ওষুধ দেন না?

মনোবিজ্ঞানী (Psychologist) এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞ (Psychiatrist) - এই দুটি পেশা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করলেও এদের প্রশিক্ষণ এবং কাজের ধরণ সম্পূর্ণ ভিন্ন।

  1. চিকিৎসাশাস্ত্রের প্রশিক্ষণ: মনোরোগ বিশেষজ্ঞ (Psychiatrist) হলেন একজন মেডিকেল ডাক্তার। তারা প্রথমে এমবিবিএস (MBBS) ডিগ্রি অর্জন করেন, অর্থাৎ সাধারণ চিকিৎসকদের মতোই তাদের চিকিৎসাশাস্ত্রের উপর গভীর জ্ঞান থাকে। এরপর তারা মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে বিশেষীকরণ (Specialization) করেন। এই মেডিকেল প্রশিক্ষণের কারণেই তাদের ঔষধ প্রেসক্রাইব করার এবং অন্যান্য শারীরিক চিকিৎসা (যেমন, ইলেক্ট্রোকনভালসিভ থেরাপি- ECT) দেওয়ার আইনি ও একাডেমিক ক্ষমতা থাকে।

  2. মনোবিজ্ঞানীর প্রশিক্ষণ: অন্যদিকে, একজন মনোবিজ্ঞানী (Psychologist) মনোবিজ্ঞান (Psychology) বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন, যেমন - স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি (Ph.D.) ডিগ্রি। তারা মানব মন, আচরণ, আবেগ, চিন্তাভাবনা এবং মানসিক প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত পড়াশোনা করেন এবং গবেষণা করেন। তবে তাদের মেডিকেল প্রশিক্ষণ থাকে না। একারণেই তাদের ঔষধ প্রেসক্রাইব করার অন

তাহলে মনোবিজ্ঞানীরা কিভাবে কাজ করেন?

মনোবিজ্ঞানীরা ঔষধ ব্যবহার না করে মূলত থেরাপি (Therapy) বা কাউন্সেলিং (Counseling) এর মাধ্যমে মানসিক সমস্যার সমাধান করেন। তাদের কাজের মূল ভিত্তি হলো রোগীর সাথে কথা বলা, তাদের চিন্তাভাবনা ও আচরণ বিশ্লেষণ করা এবং তাদের সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য নতুন কৌশল শেখানো। তাদের প্রধান কাজগুলো হলো:

  1. সাইকোথেরাপি বা টক থেরাপি (Psychotherapy / Talk Therapy): এটি মনোবিজ্ঞানীদের প্রধান হাতিয়ার। বিভিন্ন ধরনের সাইকোথেরাপির মাধ্যমে তারা কাজ করেন, যেমন:

    • কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপি (CBT - Cognitive Behavioral Therapy): এটি মানুষকে তাদের নেতিবাচক বা ভুল চিন্তাভাবনা এবং আচরণগত প্যাটার্ন চিনতে ও পরিবর্তন করতে সাহায্য করে, যা মানসিক সমস্যার কারণ হয়।
    • ডায়ালেক্টিক্যাল বিহেভিওরাল থেরাপি (DBT - Dialectical Behavioral Therapy): এটি আবেগ নিয়ন্ত্রণ, মানসিক চাপ মোকাবেলা এবং সম্পর্কের উন্নতিতে সাহায্য করে, বিশেষ করে যাদের তীব্র আবেগজনিত সমস্যা আছে।
    • **সাইকোডাইনামিক থেরাপি (Psychodynamic Therapy): ** এই থেরাপি মানুষের অবচেতন মনের গভীরে থাকা পুরনো অভিজ্ঞতা বা সংঘাতগুলি চিহ্নিত করে, যা বর্তমান সমস্যার কারণ হতে পারে।
    • হিউম্যানিস্টিক থেরাপি (Humanistic Therapy): এটি ব্যক্তির আত্ম-উপলব্ধি এবং ব্যক্তিগত বিকাশের উপর জোর দেয়, যাতে তারা নিজেদের সর্বোচ্চ সম্ভাবনায় পৌঁছাতে পারে।
    • ফ্যামিলি থেরাপি (Family Therapy) বা কাপল থেরাপি (Couple Therapy): সম্পর্কে বা পরিবারে সমস্যা থাকলে, মনোবিজ্ঞানীরা সদস্যদের মধ্যে যোগাযোগ এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া উন্নত করতে সাহায্য করেন।
  2. মূল্যায়ন ও নির্ণয় (Assessment & Diagnosis): মনোবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ধরনের মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা (Psychological Tests) পরিচালনা করেন, যেমন - বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষা (IQ Test), ব্যক্তিত্ব পরীক্ষা (Personality Test), বা নিউরোসাইকোলজিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট (Neuropsychological Assessment)। এর মাধ্যমে তারা কোনো ব্যক্তির মানসিক অবস্থা, জ্ঞানীয় ক্ষমতা বা নির্দিষ্ট কোনো সমস্যার গভীরতা নির্ণয় করেন।

  3. কাউন্সেলিং (Counseling): এটি মূলত দৈনন্দিন জীবনের চাপ, মানসিক কষ্ট বা ছোটখাটো সমস্যা মোকাবিলায় ব্যক্তিকে সহায়তা করে। এটি থেরাপির চেয়ে স্বল্পমেয়াদী হতে পারে।

  4. গবেষণা (Research): অনেক মনোবিজ্ঞানী মানব মন এবং আচরণ নিয়ে গবেষণা করেন, যা মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি করে এবং নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবনে সাহায্য করে।

  5. পরামর্শদান (Consultation): তারা স্কুল, কর্মক্ষেত্র বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ প্রদান করেন।

সংক্ষেপে, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ (Psychiatrist) শারীরিক এবং রাসায়নিক দৃষ্টিকোণ থেকে মানসিক রোগের চিকিৎসা করেন এবং ওষুধ ব্যবহার করেন। অন্যদিকে, মনোবিজ্ঞানী (Psychologist) মনোবৈজ্ঞানিক কৌশল এবং থেরাপির মাধ্যমে রোগীর চিন্তাভাবনা, আবেগ এবং আচরণ পরিবর্তন করে তাদের মানসিক সুস্থতা অর্জনে সহায়তা করেন। অনেক ক্ষেত্রে, একটি সামগ্রিক চিকিৎসার জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং মনোবিজ্ঞানী একসাথে কাজ করেন, যেখানে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ওষুধের দিকটি দেখেন এবং মনোবিজ্ঞানী থেরাপির দিকটি পরিচালনা করেন।

আপনার মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে, একজন যোগ্য পেশাদারের সাথে কথা বলতে দ্বিধা করবেন না।